চার বছর আগের তুলনায় এবার নির্বাচনের পর ফলাফল জানতে অপেক্ষার সময় কিছুটা কম হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে পাঁচ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল, যা ২০০০ সালের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা নির্বাচনি অপেক্ষার ঘটনা ছিল। এর প্রধান কারণ ছিল কোভিড-১৯ মহামারির সময় মেইল-ইন ভোটের ব্যাপক ব্যবহার, যা অনেক রাজ্য দ্রুততার সঙ্গে সামাল দিতে প্রস্তুত ছিল না।


তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পর থেকে কিছু রাজ্য নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে এবং এবার মেইল-ইন ভোটের সংখ্যা কম হতে পারে। যা ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সাহায্য করবে। যদিও নির্বাচনের রাতে চূড়ান্ত ফলাফল জানা নাও যেতে পারে।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কুইন ইয়ারগেইন বলেন, এ বছর কিছুটা ভিন্ন হবে। ২০২২ সালের মতো দ্রুত নাও হতে পারে, তবে ২০২০ সালের মতো এত দীর্ঘ সময় লাগবে বলে আমি মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বুধবার বিকেল বা বৃহস্পতিবারের পর থেকেই মূলত নির্বাচনের ফলাফলে খুব বেশি প্রশ্ন ছিল না।

২০২০ সালের আগে, মার্কিনিরা সাধারণত দ্রুত ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে পরিচিত ছিল। নির্বাচনের পর মঙ্গলবার বা বুধবার সকালেই ফলাফল ঘোষণা করা হতো। কিন্তু চার বছর আগে মহামারি পরিস্থিতিতে অনেকেই মেইল-ইন ভোটের দিকে ঝুঁকেছিলেন। ফলে রাজ্যগুলোতে ভোট গণনার গতি কমে যায়।

ফেডারেল রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালের নির্বাচনে মেইল-ইন ভোট ৪৩ শতাংশেরও বেশি ছিল। যা ২০১৬ ও ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। এই বিশাল পরিমাণ মেইল-ইন ভোট গণনা করতে রাজ্যগুলোতে সময় লেগেছিল, যা নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল।

ইয়ারগেইন বলেন, অনেক রাজ্য আইন অনুযায়ী মেইল-ইন ব্যালট খোলা বা স্বাক্ষর যাচাই করতে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল। এই বিশাল সংখ্যক ব্যালট সম্পূর্ণভাবে প্রক্রিয়াকরণের জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন ছিল।

নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও উদ্ভাবন গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা পরিচালক ক্রিস মান নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘনিষ্ঠতাকেও নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। ২০২০ সালে বাইডেন প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মাত্র এক শতাংশ পয়েন্টের ব্যবধানে জয়ী হন।

এবারও নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে সংবাদমাধ্যমের জন্য ফলাফল ঘোষণা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। মান বলেন, যদি নির্বাচনের ফলাফল অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়, তবে চূড়ান্ত ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে।

কিছু রাজ্য নির্বাচনের আগেই ব্যালট প্রক্রিয়াকরণের নীতিমালা পরিবর্তন করেছে। যা ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সহায়ক হবে। বিভিন্ন রাজ্যে মেইল-ইন ব্যালট প্রক্রিয়াকরণ নির্বাচন দিবসের আগে শুরু করা যাবে। প্রায় অর্ধেক রাজ্যে ব্যালট মেশিনে স্ক্যানিংয়ের কাজও আগে থেকে করা যাবে।

তবে যদি পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন রাজ্যের ফলাফল নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে। এই রাজ্য দুটির ফল বিলম্বিত হলে দ্রুত ফলাফল জানা নাও যেতে পারে। কারণ এই রাজ্যগুলোতে ব্যালট প্রক্রিয়াকরণ ভোটের দিনে আগে শুরু করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞ পিট সিট বলেন, নির্বাচনে যত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং যত বেশি সময় লাগবে, ততই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে।

তিনি মানুষকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ দ্রুত ফলাফল প্রত্যাশা করা আধুনিক সমাজের একটি প্রবণতা।

সাধারণত নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে ততই সমাজকে আগের জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বছরও সম্ভবত নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুমুল হবে এবং ফলাফল জানতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

সূত্র: এপি

Post a Comment

أحدث أقدم