আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক মঞ্চ প্ল্যাটফর্মে’ আনা যায় কী-না তা নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে অন্যদের সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য প্রক্রিয়ার চেষ্টার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকও।  

এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের ঐক্যের একটি গুঞ্জন ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী জামায়াতের ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।  

জামায়াত মদিনার নয় মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় মন্তব্য করে দলটির কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।হেফাজত আমিরের এ বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

গত শুক্রবার ফেনী মিজান ময়দানে দেওয়া বক্তৃতায় মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, জামায়াতে ইসলাম সকল ভ্রান্ত ফেরকা সমূহের মধ্যে নিকৃষ্ট দল। এমনকি তারা কাদিয়ানী সম্প্রদায় থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা জামায়াতে ইসলামের দ্বারা ইসলামের যে ক্ষতি হয়েছে, কাদিয়ানীদের দ্বারাও সে ক্ষতি হয়নি। আমরা জামায়াতে ইসলামকে ইসলামী দল মনে করি না। জামায়াতে ইসলাম মদিনার ইসলাম চায়না, তারা মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।  


তিনি আরও বলেন, হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে ইসলাম হেফাজতের জন্য। আমাদেরকে ভ্রান্ত আক্বিদার দলসমূহকে মোকাবেলা করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।আমিরে হেফাজতের বক্তব্যের সময় হাজার হাজার জনতা নায়ারে তাকবিরের শ্লোগানের মাধ্যমে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান।

ফেনী জেলা হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- হেফাজত মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামবাদী, মাওলানা নূর হোসাইন নূরানি প্রমুখ।  

এর আগে গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির ও দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমীও একই বিষয়ে কথা বলেছেন। সংগঠনের ব্যানার ও পদবি ব্যবহার করে হেফাজতের নীতি-দর্শন থেকে কোনো নেতাকর্মীর বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, গঠনতান্ত্রিকভাবে হেফাজতের অরাজনৈতিক অবস্থানের ওপর যে অঙ্গীকার রয়েছে, সেটাকে সর্বাত্মকভারবে বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে দেওবন্দী ধারার পূর্বসুরী হক্কানী উলামায়ে কেরামসহ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের যে মতাদর্শিক অবস্থান, সেখান থেকেও হেফাজতে ইসলাম বিচ্যুত হবে না।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রায় সময়ই বলতেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনই রাজনীতিতে জড়াবে না, ক্ষমতার মসনদে বসবে না। হেফাজত ক্ষমতায় যেতে কারো সিঁড়ি হিসেবেও ব্যবহৃত হবে না। তবে হেফাজতের ইমান-আকিদার নীতি-আদর্শকে অবজ্ঞা করে কেউ ক্ষমতার মসনদে থাকতেও পারবে না।'

প্রতিষ্ঠাতা আমিরের এই দর্শন কঠোরভাবে অনুসরণ করে কোনোরূপ ছাড় না দিয়ে এর ওপর দৃঢ় থাকা সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর কর্তব্য।


Post a Comment

Previous Post Next Post